1. [email protected] : Admin : sk Sirajul Islam siraj siraj
  2. [email protected] : admi2017 :
  3. [email protected] : Sk Sirajul Islam Siraj : Sk Sirajul Islam Siraj
  • E-paper
  • English Version
  • শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ অপরাহ্ন

ব্রেকিং নিউজ :
বিনোদন :: গান গাইতে গাইতে মঞ্চেই গায়কের মর্মান্তিক মৃত্যু!,  খেলার খবর : অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ, বিমানবন্দরে যুবাদের জানানো হবে উষ্ণ অভ্যর্থনা,

মতামত:- ইতিহাস ও ঐতিহ্যে ভরপুর মৌলভীবাজার

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
  • ১৩২ বার পঠিত

ড. আজিজুল আম্বিয়া
সবুজ চা বাগান, শ্বাসরুদ্ধকর জলপ্রপাত এবং প্রচুর সবুজের জন্য পরিচিত মৌলভীবাজার নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্পট। দেশে দেশে সুগন্ধ ছড়াচ্ছে মৌলভীবাজারের আগর-আতর । মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলাকে বলা হয় আগর-আতরের আঁতুড়ঘর। বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, এ এলাকায় আগর চাষের ইতিহাস প্রায় ৪০০ বছরের। ৬৫২ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত ভাষায় রচিত ‘হর্ষ চরিত’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে এ গ্রন্থের রচয়িতা আসামের মহারাজা বর্মণের কাছ থেকে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থেকে সংগৃহীত আগর কাঠ ও তরল আতর উপহার পেয়েছিলেন। কথিত আছে, রাজা গৌরগোবিন্দকে পরাজিত করার পর হজরত শাহজালাল (রা.) রাজভাণ্ডার থেকে মূল্যবান আগর কাঠ ও আতর পেয়েছিলেন। ১৫৯০ খ্রিষ্টাব্দে আবুল ফজল আল্লামী রচিত ‘আইন-ই-আকবরি’ গ্রন্থে আগর কাঠ, আগর তেল এবং আগর থেকে আতর আহরণের বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বড়লেখায় আগর চাষের বিস্তার ও ব্যবসা সুসংগঠিত হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। সেসব কারণে মৌলভীবাজারকে আগর-আতরের জেলা বলা হয়। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার মৌলভীবাজার জেলা। ১৯৮২ সালে ১ এপ্রিল মৌলভী সৈয়দ কুদরত উল্লা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাজারটি কেন্দ্র করে ২৬টি পরগনা নিয়ে দক্ষিণ শ্রীহট্ট মহকুমা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দক্ষিণ শ্রীহট্ট বা সাউথ সিলেট নামের বদলে এ মহকুমার নাম মৌলভীবাজার রাখা হয়। ১৯৮৪ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়। এই জেলার আয়তন ২৭৯৯ বর্গ কিলোমিটার। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহি হামিদুর রহমান এই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা আমবাসা গ্রামে শহীদ হন। মৌলভীবাজার একটি সীমান্তবর্তী জেলা। এর দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য এবং পূর্বে ভারতের আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য রয়েছে। ৭টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা, ৬৭টি ইউনিয়ন, ২০১৫টি গ্রাম নিয়ে এই জেলা গঠিত। এই জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ৪,৫৬,৩৯২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৩১,৮৪২ জন, নারী ভোটার ২,২৪, ৫৪৭ জন ও হিজরা ভোটার ৩ জন। এই জেলার উল্লেখযোগ্য নদ-নদীগুলো হলো মনু, ধলাই, জুড়ী, লংলা প্রভৃতি। আর হাওরগুলো হলো- হাকালুকি, হাইল ও কাউয়াদিঘি উল্লেখযোগ্য। মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলাকে চায়ের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। চা-পাতা ও চা-শিল্পের জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজার জেলা। এ জেলায় মোট ৯২টি চা বাগান ও ১০টি রাবার বাগান, ৩টি সরকারি কলেজ, ২১টি বেসরকারি কলেজ, ৩টি সরকারি, ১৫৫টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৫৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। এ ছাড়া ১১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৯৫২টি মসজিদ, ৩৭৪টি মন্দির, ১৬টি গির্জা, ১টি পলিটেকনিক ইন্নস্টিটিউট, ১টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ১টি সেবা ইন্নস্টিটিউট, ৭টি সরকারি হাসপাতাল, ৫টি বেসরকারি হাসপাতাল, ৬টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স , ৩৮ টি পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও রয়েছে। (১) ইউনিকল, কালাপুর প্রজেক্ট ও (২) ভাটেরা গ্যাস ফিল্ড নামে ২টি গ্যাস ফিল্ড রয়েছে, মৌলভীবাজার সদর থানার শেরপুরে ১টি বন্দর রয়েছে। মোট নদী পথ ১৭০ মাইল। এই জেলায় মণিপুরী, খাসিয়া, সাঁওতাল, টিপরা, ত্রিপুরা, গারো উপজাতির মোট ৪২,৯১০ জন উপজাতির বসবাস রয়েছে। দেওয়ান আব্দুল বাছিত (সাবেক পাকিস্তান আমলের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী মন্ত্রী), এম সাইফুর রাহমান (অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ), আজিজুর রহমান (রাজনীতিবিদও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত), সৈয়দ মহসিন আলি (রাজনীতিবিদ), সৈয়দ মুজতবা আলী (সাহিত্যিক), লীলা নাগ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী ছিলেন) , ড. খলিকুজ্জামান (অর্থনীতিবিদ) এরা সবাই মৌলভীবাজারের আলোকিত সন্তান । মৌলভীবাজার জেলায় এত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নেই। জেলা সদরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল থাকলেও প্রয়োজনীয় ওষুধ, ভালো ডাক্তারের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না। তাই রেফার করা রোগীকে নিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে যেতে হয়। পথ অনেকটা দূর। তাই অনেক রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যায়, এ ছাড়া হাসপাতালে যেসব যন্ত্রপাতি আছে এগুলোর মধ্যে সব যন্ত্রপাতি কাজ করে না। তা মেরামতও করা হচ্ছে না। আর এই অজুহাতে সাধারণ মানুষের পকেট থেকে টাকা-পয়সা লুটে নিচ্ছেন একদল প্রতারক। তাই এ জেলার প্রাণের দাবি মৌলভীবাজারে মেডিকেল কলেজ চাই; কিন্তু এই দাবি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত গেলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি কি কারণে এই কথা না জেনে অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর ওপর নাখোশ হয়ে রয়েছেন। তাই সুশীল সমাজ মনে করেন, এই গণমানুষের দাবি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা উচিত। জেলার রাজনগর উপজেলা হয়ে গ্যাসের লাইন চলে গেলেও রাজনগর থানায় এখনো গ্যাস নেই। এই কারণে মানুষের মনে অনেক ক্ষোভ আছে। মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত হিসেবে সমধিক পরিচিত। এটি প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও ঠাণ্ডাপ্রবণ অঞ্চল হলো মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার শ্রীমঙ্গল এলাকা। মৌলভীবাজার জেলার বিশেষ দর্শনীয় স্থানগুলো হলো- জেলার চা বাগান , লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান , হাকালুকি হাওর, পৃথিমপাশা জমিদার বাড়ি, মাধবপুর চা বাগান লেক, হামহাম জলপ্রপাত, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাইক্কা বিল, খোজার মসজিদ, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ, কমলারানীর দিঘি, মনু ব্যারেজ, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, মুরইছড়া ইকোপার্ক, রাবার বাগান ও টিলা (কুলাউড়া) ইত্যাদি। সাতকড়া, পান, লেবু, আনারস, কমলা ও কাঁঠালের জন্য বিশেষ সুখ্যাতি আছে এ জেলার। এখানে গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট ও গলফ, দ্যা প্যালেস লাক্সারি রিসোর্ট, দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, রাঙ্গাউটি রিসোর্ট, হোটেল ওয়েস্টার্ন প্লাজাসহ অনেক অভিজাত হোটেল রয়েছে যা ইতোমধ্যে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। এই জেলার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে চা, কমলা, সাতকড়া, ম্যানেজার স্টলের রসগোল্লা, লেবু, আনারস অন্যতম। জেলায় মোট ৪৫৭৫টি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প রয়েছে। তন্মধ্যে শীতলপাটি, বেত, কাঠ ও বাঁশশিল্প উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলে অনেক প্রবাসী রয়েছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশে এরা টাকা-পয়সা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে চলমান রাখতে সাহায্য করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম বাজেটের টাকার বৃহৎ অংশ এসেছিল যুক্তরাজ্য থেকে আর সেই সিলেটিদের অন্যতম ছিলেন এই মৌলভীবাজা জেলার লোকজন। এ ছাড়া আগরশিল্পেও এ জেলার মানুষ যথেস্ট ভূমিকা রেখে বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। অথচ এই জেলার মানুষ বিভিন্ন কারণে অবহেলিত হয়ে আসছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। এর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, রাজনৈতিক অনৈক্য, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অভাব এবং পূর্বের মতো রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা নেই এবং সরকারের অসহযোগিতাকে দায়ী করিলেও এই জেলার মানুষকে বসে থাকলে হবে না। তাদের অধিকারের জন্য লড়তে হবে এবং সরকারকেও এ ব্যাপারে সহনশীল মনোভাব পোষণ করতে হবে তবেই এই জেলার বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি পাবে এবং সব সমস্যার সমাধান হবে বলে গুণীজন মনে করেন।

লেখক: কলামিস্ট

প্লিজ আপনি ও অপরকে নিউজটি শেয়ার করার জন্য অনুরোধ করছি

এ জাতীয় আরো খবর..